Sunday, May 27, 2007

তিন কন্যা

বাড়ির পাশে রইচ চাচা তিনটি যাহার কন্যা,
সেই দুঃখেই তিনি না কি পুত্র আর চান না।
কন্যার হ্যাট্টিক হওয়ায় তিনি আর পীর মাজারে যাননি,
খন তার কন্যারা শুনি দু'নয়নের তিন মনি।
একই গায়ের সুলতান চাচা তারও কন্যা তিনটি,
তৃতীয় কন্যার জন্ম শুনে খারাপ হলো মনটি-
মনের দুঃখে চাচা আমার ছাড়লো মসজিদে আসা,
কথা শুনে ইয়ার্কি সম্পর্কে বাড়লো তামাসা।
সবাই বলে হৃদয়ে তার পুত্রের যায়গা শুন্য,
কন্যা দিয়েই তিনি সেথাই করবেন জানি পূর্ণ।
তিন কন্যার আরেক জনক যিনি নিকট আত্মীয় আমার,
এখনও তার পুত্রর সাধ ছাড়েনি শুনি দুয়ার।
ছোট কন্যার জন্ম শুনে যাননি তাকে দেখতে,
এখন তিনি ছোটটি ছাড়া পারেননা কোথাও থাকতে।
ছোট কন্যার নামটি তরু অগ্নি ঝরে বাকে,
মেজ কন্যারা বুদ্ধি বেশী বড়টি পড়ে ফাঁকে।
বেকার একটি চাচা আমার ইমরা তার নামটি,
সংসারে সবার বড় তিনি কন্যা তার তিনটি।
বড়টির বিয়ে শেষ ছোটটি কাস থ্রির,
সমাজ সেবা করেন তিনি সময় যেহেতু ফ্রী।
নজরুল চাচার দুঃখ বড় নেই সন্তান তার,
সন্তানের আশায় আশায় করছেন জীবন পার।
এদের কথা শুনে নজরুল চাচা বলে,
"তিনটির যায়গায় একটি হলেও দুঃখ যেত চলে"।।


(১৬ পৌষ ১৪০৭/কালিশংকর পুর, কুষ্টিয়া)

প্রিয়া

প্রিয়াঃ আমি যখন থাকবো না মর্ত্যলোকের রিক্তপুরে;
হইতো আমি হারিয়ে যাব গভীর কোন অন্ধকারে;
আমোরি দেওয়া স্মতির মেলা রইবে কি তোমার হৃদয় জুড়ে?
যেদিন তোমা দেখিনু প্রথম;
প্রথম মোদের সেই যে কথন,
দেবে কি তোমা ক্ষণ রোদনভ্রমেও কভু আমোর তরে?
ফুটবে যখন রক্ত গোলাপ আমোরি এই বুকটি চিরে,
প'ড়বে কি তোমা দৃষ্টি সীমা নির্জনে মোর সমাধি পরে?
গভীর রাতে হইতো কভু দেখবে তুমি আমার স্বপন;
হইতো তোমা থাকবে পার্শ্বে আমোরই মতো অন্য স্বজন;
আমোর স্মৃতি আমোরই ছোয়া দেবে কি তোমা গহিন বেদন?
মাথা রেখে এ বুকেতেবলেছিলে থাকবে সাথে;
কথা কি স্বপন রাতে, ঝরায় অশ্রু আমোরই মতোন?
যেদিন আমি পালিয়ে গেলুম ছিন্ন করে সকল বাধন,
যেদিন সে বর্ষ আসবে ঘুরে প'ড়বে কি মনে আমার কথন?
খোলা গগনে বসবে যখন চাঁদনী আলো প'ড়বে মুখে;
চাঁদের মাঝে খুঁজবে আমায় একা আছি কেমন সুখে;
এমনই এক চাঁদনী রাতে ঝরবে অশ্রু কোন সে দুখে?
রজনীর সেই যে ক্ষণে,চেয়েছিলে আমারই পানে;
কভু কি তোমা আমোর তানে, ঝরেছে অশ্রু মর্ত্যলোকে?
শেষ দেখাতে, শেষ বেলাতে, আমোরই দু'নয়ন দেখে;
কি পেয়েছো, কি রেখেছো যে, অশ্রু ঝরে এখনও সুখে?
(১২ মাঘ ১৪০৬/পিয়ারপুর, কুষ্টিয়া)

অভিমানী

তোমায় আজি প'ড়ছে মনে কোথায় তুমি মা;
তোমার দেওয়া সেই ভালবাসা আজ আমার সাধনা।
রোজ সকালে নামাজের সময় ডাকতে আমায় এসে
"খোকা উঠো পড়তে বসো।"ডাকতে ভালবেসে।
ঘুম থেকে মা উঠতো না আমার এ পোড়া দেহ;
তোমার কভু হতো ভারি কাঁপতে যেন ঐ গেহ।
হইতো কভু ঘুমিয়ে আছি শীত কিংবা আষাঢ়ে,
কাঁথাটা তুমি কেড়ে নিয়ে তুলতে কান ধরে।
পরে ভালবেসে ডাকতে কাছে বসতে আমার পাশে
তারপরেতে সূর্য বাবু উঠতো হেসে হেসে।
অবশেষে পাঠশালাতে যখন আমি যায়,
ভাবতুম আমি, মায়ের শাসন হেথা আর নাই।
রোদ দুপুরে আসার সময় রোদে মুখটি হতো লাল,
আদর দিয়ে কোলে নিয়ে ভরতে চুমুই গাল।
আবার তুমি ঘুম পারাতে আদর করে করে,
ঘুম পারাতে আদর সোহাগ চড়ও দিতে মোরে।
ঘুম শেষে ছুটি আমার, খেলতে যেতাম মাঠে,
ভাবতুম, এমন খেলে আমার যদি দিনটি যেত কেটে।
সন্ধা হবার আগেই যেন আমার বাড়ি ফেরা চাই,
একটু দেরি হলে তোমার কি এমন ক্ষতি হয়।
আবার তুমি পড়তে বসাও, ধরতে পড়া যখন,
ভয়ে আমার কাঁপতো বুক, কাঁদতো আমার মন।
ভেবেছি তখন বাধন চিরে কেমন করে পালাই,
দুরে ঠেলে কেন এ মন তোমারে শুধু চাই।
চুপটি করে আর থেকোনা সাড়া দাও অভিমানী;
তোমার খোকা কাঁদছে আজি দাও আঁচলখানি।।

(০৮ শ্রাবণ, ১৪০৭/কালিশংকর পুর, কুষ্টিয়া)

ধরার শ্রেষ্ঠ হাসি

সূর্য বাবু তখন গিয়েছে ঢলে রয়েছে রক্তিম বেশে,
ক্লান্ত শরীরে ফিরছি বাড়ি সেদিনের কাজ শেষে।
আসতে পথে নীলদীঘিতে উঠলো মৃদু ঝড়,
ভাবছি তখন, অবশেষে কখন পাব ঘর।
দেখি, জীর্ণ বেশ এলো কেশ আট-নয় এর এক মেয়ে,
খড় কুটা কুড়ে এটেছে, লয়ে যাবে বাড়ী বেয়ে।
মাথায় তুলিতে পড়ে গেল বোঝা আবার তুলিতে যায়,
এভাবে তার দেরি হয়ে গেল এদিকে ওদিকে চাই।
শ দিয়ে যায় কোট পরা সা'ব দেখতে অতি বেশ,বলল খুকি,
"বাবু, বোঝা তুলে মম মাথায় কমাও একটু ক্লেশ।
""মাগো"- লাথি দিল সা'ব খুকি লুটালো ধরার বুকে,
বাবু সা'ব ফিরে চলে গেলে দুরে, চেয়েও দেখেনি তাকে।
দুর থেকে দেখি ব্যাথা ভরা চোখে আমিও অসহায়,
উঠলো কেঁদে - কাঁদেনি কখনও যে মোর পাষাণ হৃদয়।
আমায় দেখে কেঁদে ফেলে খুকি, চাইছে অবাক চোখে,
ভাবে, আমিও হইতো বাবুর মতো লাথি দেব তার বুকে।
ভয়ে ভয়ে চাই বলেনাকো কথা, ফিরালো মুখ খুকি,
থামলো কান্না তার মাথায় হাতটি যখন রাখি।
ছোট্ট একটি বোঝা আমি তুলে দিনু তার মাথায়,
হেসে চলে গেল খুকি, দুরে গিয়ে আবারও ফিরে চাই।
আমার হৃদয় উঠলো কেঁদে যখন পালালো সর্বনাশী,
মনে পড়ে নাকো আমি কোথায় দেখেছি এমন হাসি।
মায়ের হাসি ভুলে গেছি আমি হইতো এটা তাই-ই,
আমার দেখা এ ধরাতে শ্রেষ্ঠ হাসি এটাই।।


(১২ শ্রাবণ ১৪০৮/কালিশংকর পুর, কুষ্টিয়া)